Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২২nd নভেম্বর ২০২১

বিদ্যুৎ ও ব্যবস্থাপনা তথ্যকুঞ্জ

বিদ্যুৎ খাতে বাংলা এনসাইক্লোপিডিয়া

 

বিপিএমআই ছাত্র, কর্মচারী এবং বিদ্যুৎ খাতে কর্মরত পেশাদারদের জন্য এবং সকলের নিকট সহজবোধ্য একটি বিশ্বকোষ সংকলন শুরু করেছে। এটা ইন্টারনেটে আপলোড করা হল, যা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বিদ্যুৎ বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং বিপিএমআই-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এর লিংক থাকবে। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের অফিসিয়াল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ বিশ্বকোষ সম্পর্কে অবহিত করা হবে। নিচের 'প্রবেশ' লিংকে ক্লিক করে বিদ্যুৎ খাতের প্রথম বাংলা এনসাইক্লোপিডিয়ায় প্রবেশ করা যেতে পারে।

 

বিপিএমআই-এর প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণকারীগণ বিশ্বকোষের বেশিরভাগ আর্টিকেলের রচয়িতা। বিদ্যুৎ খাতে কর্মরত বা কর্মরত নন এমন যে কেউ বিশ্বকোষের নিবন্ধ লিখতে পারেন, আর্টেকেলে সাথে তাদের নাম উল্লেখ করা হবে। যদি কারও পূর্বের কোন বিষয়ের উন্নয়নের জন্য কোন ধারণা বা প্রস্তাব থাকে, তাহলে তা'ও প্রেরণ করতে পারেন। বিশ্বকোষে তাদের নামও সংযুক্ত করা হবে।

 

নিয়মাবলী

 

যেহেতু ইংরেজিতে পর্যাপ্ত resource materials বা পরিভাষা ইন্টারনেট এবং বিভিন্ন বইয়ে সহজলভ্য, তাই আমাদের উদ্দেশ্য বাংলায় একটি বিশ্বকোষ গড়ে তোলা। তবে দ্বিভাষিক প্রবন্ধ দাখিল করা যেতে পারে। বাংলা টাইপ অবশ্যই ইউনিকোড ফন্টে (নিকস বা সোলাইমানলিপি) টাইপ করতে হবে।

 

নিবন্ধে যতটা সম্ভব সাম্প্রতিক উদ্ভাবন এবং আবিষ্কার প্রতিফলন থাকলে ভাল হয়। তাতে চিত্র, পরিসংখ্যান এবং ছবি যোগ করা যেতে পারে, কিন্তু কপিরাইটকৃত উপা দান ব্যবহার করা উচিত হবে না। বিশেষ করে কর্মকর্তার নিজের তোলা ছবি এবং আঁকা নকশা/ডায়াগ্রাম/ডিজাইন যদি বিষয়ের সাথে প্রাসঙ্গিক হয়, তা’হলে সংযোজন করা যেতে পারে।

 

 

প্রবেশ

 

 

 

 

 

ট্রান্সফরমার

এ জেড এম মইনুল

 

সহজ কথায় বলা যায়, এমন একটি ইলেক্ট্রনিক/ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্র যেটি ইনপুট হিসেবে ইলেক্ট্রিক পাওয়ার নিয়ে আউটপুটেও ইলেকট্রিক পাওয়ার দিবে, কিন্তু এদের মধ্যে কোন তারের সংযোগ থাকবে না।

কিন্তু, তাত্ত্বিক ভাবে বলতে গেলে বলতে হবে, ”ট্রান্সফরমার এমন একটি স্থির যন্ত্র বিশেষ যেখানে কারেন্টের সাপেক্ষে, এসি সাপ্লাই এর ভোল্টেজ বাড়ানো হয় নয়ত কমানো হয়”।

 

ট্রান্সফরমার মূলত মিউচুয়াল ইন্ডাকশনের মাধ্যমে কাজ করে। প্রাইমারী থেকে সেকেন্ডারী তে পাওয়ার ট্রান্সফার করে এই পদ্ধতি তে। আমরা জানি যে পাওয়ার এর সূত্রানুযায়ী,

 

P = V × I

 

এখানে,

P = পাওয়ার,

V = ভোল্টেজ,

I = কারেন্ট

 

অর্থাৎ, ভোল্টেজ ও কারেন্টের সমন্বয়েই মোট পাওয়ার। অতএব, কারেন্টের পরিমাণ কমিয়ে ভোল্টেজ বৃদ্ধি করলেও মোট পাওয়ার প্রায়ই সমান থাকবে।

 

আবার, কারেন্ট প্রবাহমাত্রা নির্ভর করে ক্যাবলের পুরুত্ব বা ক্যাবল কতোটা মোটা তার উপরে। অর্থাৎ ক্যাবল মোটা হলে বেশি কারেন্ট প্রবাহিত হতে পারবে আবার চিকন হলে কম কারেন্ট প্রবাহিত হবে।  অন্যদিকে ক্যাবলের কম পুরু হলে খরচ কম হবে। ট্রান্সমিশন লাইনে ভোল্টেজ বাড়িয়ে, কম কারেন্ট ব্যবহার করলে ট্রান্সমিশন ক্যাবলের খরচ কম পড়বে।

 

এছাড়াও কারেন্ট প্রবাহ কম হলে ট্রান্সমিশন লাইন কম উত্তপ্ত হবে তাই কপার লস কম হবে, ফলে লাইনের আড়াআড়ি ভোল্টেজ ড্রপ কম হবে।

 

ইত্যাদি বিষয়সমূহ বিবেচনা করে ট্রান্সমিশন লাইনে মোট পাওয়ার কে ঠিক রেখে কারেন্ট কমিয়ে দিয়ে ভোল্টেজ বৃদ্ধি করে সঞ্চালন করা হয়।

 

এটাকে বলা হয় মিউচুয়াল ইন্ডাকশন। অর্থাৎ প্রাইমারী কয়েলে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে এর চার পাশে একটি ম্যাগনেটিক ফিল্ড বা তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশের সৃষ্টি হয়। আর এই ফিল্ড থেকে ফ্লাক্স সংগ্রহ করে সেকেন্ডারী কয়েল। তখন তাদের মধ্যে একটি মিউচুয়াল/কমন ইন্ডাকশন এর তৈরি হয়।

 

যার ফলে সেকেন্ডারীতে তড়িৎ প্রবাহিত হয়। এই প্রবাহিত তড়িৎ এর মান নির্ভর করে সেকেন্ডারী ও প্রাইমারী তে ব্যবহৃত প্যাঁচ সংখ্যার উপরে। যাকে বলে ট্রান্সফরমারমেশন রেশিও।

 

ট্রান্সফরমারের ক্ষমতার একক কেভিএ (KVA)। অর্থাৎ কিলোওয়াট ভোল্ট এম্পিয়ার। কারণ টা হল, আমরা জানি যেকোন মেশিনের ক্ষমতার একক নির্ধারণ করা হয় তার #লস এর উপর ভিত্তি করে। এখানেও ঠিক একই বিষয়। ট্রান্সফরমারের লস গুলো হল:

 

১। আয়রন লস/কোর লস

২। কপার লস

 

আচ্ছা, তো এখন আয়রন লস মানেই ভোল্টেজ এর ব্যাপার, আর কপার লস মানেই কারেন্ট এর লস। তাহলে মোটের উপর দাঁড়াল ভোল্ট এম্পিয়ার। এ জন্যেই ট্রান্সফরমার এর ক্ষমতার একক হিসেবে কিলোওয়াট ভোল্ট এম্পিয়ার বা কেভিএ  (kVA) লেখা হয়ে থাকে।

 

আসলে যেকোন মেশিন বা বস্তুর ই আইডিয়াল ফর্ম বা তার আদর্শ একটি অবস্থাকে বুঝায় যেখানে তার লসের পরিমাণ ০%। মূলত ল্যাবরেটরিতে গবেষণার সময় এই আদর্শ মান কে ব্যবহার করা হয়। মানে ইনপুটে দেয়া পাওয়ারের ১০০%-ই আউটপুট পাওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবিক পর্যায়ে তা হয় না। কারণ যখন ওই যন্ত্রকে যখন বাস্তবে রূপ দেওয়া হয় তখন অনেক গুলো লস এসে সামনে পথ আটকায়।

 

ছোট ট্রান্সফরমারের কোরের মধ্যে আসলে অনেক গুলো (E) এবং (I) এবং বড় সাইজের ট্রান্সফরমারের আলাদা আকৃতির স্টিলের পাত দেখা যায়। আসলে এই প্রতিটি পাতের গায়ে এক প্রকার ভারনিশ/লেমিনেশন পেইন্ট ব্যবহার করা হয়। কারন এতে ইলেকট্রিক শর্ট সার্কিট হওয়ার ভয় থাকে না।

 

কিন্তু ইন্সুলেশন দেওয়ার প্রধান কারণ হল যাতে একেকটি কোর আলাদা ভাবে থাকতে পারে। তারা যেন একে অন্যের গায়ে লেগে না যায়। এতে তাদের আলাদা আলাদা কোরের রেজিস্টেন্স অনেক কম থাকে বিধায় ভোল্টেজ ড্রপ কম হয়।

 

যদি কোন ইনসুলেশন ব্যবহার না করা হত তাহলে সবগুলো কোর মিলে একটি বড় সাইজের কোরে পরিণত হতো এবং এর আয়তন বেড়ে যেত। ফলে এর রেজিস্টেন্স ও অনেক বেশি হয়ে যেত। ফলে অনেক ভোল্টেজ ও ড্রপ হত। তাই এই লস ঠেকাতেই ট্রান্সফরমারে ইনসুলেশন ব্যবহার করা হয়।

 

ট্রান্সফরমারের আয়রন লস টা নির্ভর করে ম্যাক্সিমাম ফ্লাক্স ঘনত্ব আর সাপ্লাই ফ্রিকোয়েন্সি এর উপর। যেহেতু ট্রান্সফরমার সব সময় নির্দিষ্ট অর্থাৎ ফিক্সড ফ্রিকোয়েন্সি আর সাপ্লাই ও ফিক্সড তাহলে এখানে কোর ও আয়রন লস প্র্যাক্টিক্যাল যেকোন লোডের জন্যই সমান হয়। অর্থাৎ এখানে আয়রন/কোর লস কন্সট্যান্ট বা অপরিবর্তিত লস হিসেবে গণ্য হয়। আর এটিই মুলত এডি কারেন্ট লস নামে পরিচিত।

 

এডি কারেন্ট লস কমাতে চাইলে অবশ্যই কোরের লেমিনেশন গুলো কে যথা সম্ভব পাতলা/চিকন করতে হবে। এবং লেমিনেশন গুলোকে ভালভাবে লেমিনেটিং বা ইনসুলেটিং করা যায় তাহলে এডি কারেন্ট লস অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

 

আমরা জানি ট্রান্সফরমার তৈরি হচ্ছে তড়িৎ চৌম্বকীয় বস্তু যেমন লোহা, ফেরাইট কোর প্রভৃতি দ্বারা। এখন এই ট্রান্সফরমার যখন কোন অল্টারনেটিং কারেন্টের দ্বারা বারবার ম্যাগনেটাইজ ও ডি-ম্যাগনেটাইজ করা হয় তখন এর অভ্যন্তরে থাকা অণু বা কোর ম্যাটেরিয়াল গুলো বারংবার দিক পরিবর্তন করতে থাকে। এই দিক পরিবর্তনের ফলে কিছু শক্তি তাপ হিসাবে নির্গত হয় যা কোন কাজে লাগে না। একেই হিসটেরেসিস লস বলে।

 

এখানে উল্লেখ্য যে এই হিসটেরেসিস লস শুধু যে ট্রান্সফরমারেই হয় তা কিন্তু নয়। মোটর, জেনারেটর, ফ্যান থেকে শুরু করে যেখানেই কোন কয়েল কে চৌম্বকীয় বস্তুর উপর প্যাঁচানো হয় সেখানেই হিস্টেরেসিস লস দেখা যায়। তবে জেনারেটর আর ট্রান্সফরমার এ এই হিস্টেরেসিস লস টি বেশি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়।

 

পাওয়ার ট্রান্সফরমারকে ব্যবহার করা হয় High লেভেলের ভোল্টেজকে স্টেপ আপ কিংবা স্টেপ ডাউন করতে। পাওয়ার ট্রান্সফরমার যে সব লেভেলের ভোল্টেজকে স্টেপ ডাউন করতে পারে সে গুলো হলো- 400 KVA, 200 KVA, 110 KVA, 66 KVA, 33 KVA ইত্যাদি। তবে বেশিরভাগ পাওয়ার ট্রান্সফরমারের রেটিং হয় 200 MVA. এদেরকে জেনারেটিং স্টেশন এবং সাব-স্টেশন গুলোর মধ্যে ইনস্টল করা হয়। এসব ট্রান্সফরমার যাতে ১০০% Maximum Efficiency দিতে পারে সেজন্য এদেরকে সেই ভাবে ডিজাইন করা হয়।

 

সাধারন ট্রান্সফরমার এর তুলনায় পাওয়ার ট্রান্সফরমার এর সাইজ অনেক বড় হয়। খুব হাই লেভেলের ভোল্টেজকে সহজে কনজুমারের কাছে ডিস্ট্রিবিউট করা যায় না। তাই এই হাই লেভেলের ভোল্টেজকে স্টেপ ডাউন করতে হয় এবং সেজন্য পাওয়ার ট্রান্সফরমারকে ব্যবহার করে ভোল্টেজকে স্টেপ ডাউন করা যায়।

 

 

ট্রান্সফরমারের ক্ষমতার একক

মিঠুন রায়

 

ট্রান্সফরমার এর ক্ষমতার একক হল  কেভিএ ( KVA ) অর্থাৎ কিলোওয়াট ভোল্ট এম্পিয়ার। যেকোন মেশিনের ক্ষমতার একক নির্ধারণ করা হয় তার লস এর উপর ভিত্তি করে। এক্ষেত্রে ট্রান্সফরমারের লস গুলো হল ১। আয়রন লস/ কোর লস, ২। কপার লস। এখনে ট্রান্সফরমারের আয়রন লস ভোল্টেজের কারনে হয় এবং ট্রান্সফরমারের কপার লস কারেন্টের কারনে হয়। তাহলে ট্রান্সফরমারের ক্ষমতা  ভোল্টেজ ও  কারেন্ট এর গুন ফল যার মান হল ভোল্ট এম্পিয়ার।আর এ জন্যেই ট্রান্সফরমার এর ক্ষমতার একক হল কিলোওয়াট ভোল্ট এম্পিয়ার বা কেভিএ।

 

 

পাওয়ার ফ্যাক্টর

মিঠুন রায়

 

ভোল্টেজ ও কারেন্টের মধ্যবর্তী কোসাইন কোনকে পাওয়ার ফ্যাক্টর বলে। একে cosǾ দ্বারা বুজানো হয়। অন্যভাবে বলা যায় কারেন্ট ভোল্টেজের কতটুকও আগে বা পিছনে আছে তার কৌনিক পার্থক্যকে পাওয়ার ফ্যাক্টর বলে। কারেন্ট ও ভোল্টেজ যদি এক সাথে থাকে তবে পাওয়ার ফ্যাক্টর এর মান ১ হয়। আবার রেজিস্টান্ট ও ইম্পিড্যান্সকে এর অনুপাতকেও  পাওয়ার ফ্যাক্টর বলে। পাওয়ার ফ্যাক্টর হচ্ছে cos ÷ আর এই  × হচ্ছে ভোল্টেজ ও  কারেন্ট  এর মাঝে কৌনিক পাথক্য। কারেন্ট এবং ভোল্টেজের মাঝে সর্বোচ্চ কৌনিক ব্যবধান ৩৬০˚ আর cos ৩৬০˚এর মান ১। এই জন্য পাওয়ার ফ্যাক্টর এর মান ১(এক) এর বেশী হয় না ।

 

 

ট্রান্সফরমারের স্ট্যান্ডার্ড

আল্লামা তাসনিম

 

বিভিন্ন বৈদ্যুতিক মালামালের মান, সেবা ও স্পেসিফিকেশন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন স্ট্যান্ডার্ড প্রণয়ন করা হয়ে থাকে (যেমনঃ IEC, BS, ANSI, ASTM etc.)। এসব স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করার ফলে যেমনভাবে ক্রেতাদের জন্য সুবিধা হয়েছে পাশাপাশি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্যও তা সুফল বয়ে এনেছে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য যেহেতু কোন প্রোডাক্ট তৈরি করার সময় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোন স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করতে হয়, কাজেই ক্রেতারা মান ও গুণসম্মত প্রোডাক্ট পেতে পারে। ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমের জন্য ট্রান্সফরমার খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই ট্রান্সফরমারের জন্য এটি আরো জরুরি। ট্রান্সফরমারের জন্য প্রয়োজনীয় IEC স্ট্যান্ডার্ডসমূহ হচ্ছে IEC 60076-1 (general), IEC 60076-2 (Temperature Rise), IEC 60076-3 (Insulation Level), IEC 60076-4 (Lightning Impulse Test), IEC 60076-5 (Short circuit Test) etc. একটা নির্দিষ্ট ভোল্টেজ লেভেল ও নির্দিষ্ট ক্ষমতার ট্রান্সফরমারের জন্য কোন কোন জরুরি বিষয় থাকা বাধ্যতামূলক তা স্ট্যান্ডার্ডে বলা থাকে। তা না হলে এক এক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এক এক রকমভাবে তৈরি করবে। ট্রান্সফরমারে তেল কি পরিমাণে থাকবে, তেলের গুণাগুণ কেমন হবে; ভেক্টর গ্রুপ কি হবে; উয়িন্ডিং কেমন হবে, এর তাপমাত্রা কত হবে; কোর কেমন হবে, কোরের লস কত হবে; প্রোটেকশন পদ্ধতি কেমন হবে এসব কিছু স্ট্যান্ডার্ডে বলা থাকে। লসও ট্রান্সফরমারের ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । কারণ একটা ট্রান্সফরমার কম দামে কিনলেও লস বেশি হবার কারণে প্রতি মুহুর্তে অনেক ইউনিট খরচ হবে যাকে টাকার হিসেবে নিয়ে আসলে অনেক বেশি হবে। এখানেও স্ট্যান্ডার্ড কাজে লাগে। একটা ট্রান্সফরমারের বাহ্যিক সব জিনিস ভালো কিন্তু লাইনে দেবার সাথে সাথে তা অচল হয়ে যেতে পারে তাই তাকে টেস্ট করে নিতে হয়। কি কি টেস্ট করতে হবে তা স্ট্যান্ডার্ড এর মধ্যে দেয়া থাকে। ফলে ক্রেতা তা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে নিতে পারে। সুতরাং, ট্রান্সফরমারের ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ডের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।

 

 

ট্রান্সফার তেল এবং তার পরীক্ষা

মোঃ রফিকুল ইসলাম

 

ট্রান্সফরমার তেল:

 

এটি ট্রান্সফরমার এর এমন একটি অপরিহার্য উপাদান যেটি মূলত ট্রান্সফারমার কুলিং এবং ইনসুলেশনের কাজ করে থাকে। এটির বানিজ্যিক নাম পাইরানল এবং সিলিকন।

 

গুণগত বিবরণঃ মূলত নিম্নোক্ত গুণাবলী তেলের থাকতে হবে:

 

১) ঘনত্ব =০.৮৯গ্রাম/মি.লি.(২৯.৫°সে.)

২) সান্দ্রতা =২৭ সে.স্টোক্স(২৭°সে.)

৩) টেনশন=০.০৪নিউটন/মিটার।

৪) ফ্লাস পয়েন্ট =১৪০°সে.(সর্বনিম্ন)

৫) ডাই-ইলেকট্রিক স্টেন্থ=২৫কেভি/মিলিমিটার^২

৬) ব্রেকডাউন ভোল্টেজ =৬০কেভি/২.৫মিলিমিটার।

৬) ট্যানডেল্টা =০.০০২(সর্বোচ্চ)

৭) পানির পরিমান=৫০পিপিএম(সর্বোচ্চ) ইত্যাদি।

 

ট্রান্সফরমার তেলের টেস্টঃ

 

১) ব্রেক ডাউন ভোল্টেজ টেস্ট: প্রধানত ট্রান্সফরমার তেলের ব্রেকডাউন ভোল্টেজ টেস্ট করা হয়ে থাকে।

 

  চিত্রঃ ব্রেক ডাউন ভোল্টেজ টেস্ট।

 

ক) প্রথমে ট্রান্সফরমার তেলের সেম্পল সংগ্রহ করতে হবে। এটি এমনভাবে করতে হবে যেন তেলের মধ্যে কোন মইসচার গেইন না করে। এর জন্য আকাশে রোদ থাকা অবস্থায় একটি কাচের পাত্ত্রে তেল প্রথমে নিয়ে না ঝাকিয়ে আস্তে আস্তে ঘুরিয়ে ফেলে দিতে হবে  যেন জলকনা না থাকে। এরপর একটি নল দিয়ে তেল বের করে টেস্টিং বেঞ্চে নিয়ে আস্তে হবে।

 

খ) এখন, উক্ত তেল টেস্টিং ডিভাইসের পাত্ত্রে দিয়ে পরিপূর্ণ করতে হবে। টেস্ট ইলেক্ট্রোড দয়ের মাঝে গ্যাপ ২.৫ মিলিমিটার রেখে টেস্ট ভোল্টেজ আস্তে আস্তে বাড়াতে হবে। যে ভোল্টেজ লেভেল এ ইলেক্টোড দয়ের মাঝে ইলেক্ট্রিক আর্ক উৎপন্ন হয়ে ব্রেকডাউন হবে সেটেই হবে তেলের ব্রেকডাউন ভোল্টেজ লেভেল।

 

গ) এভাবে কয়েক ধাপে একই টেস্ট করে গড় করে প্রকৃত মান পাওয়া যায়।

 

২) এছাড়াও ময়েশ্চার কন্টেন্ট টেস্ট, ওয়াটার কন্টেন্ট টেস্ট প্রভৃতি করা হয়ে থাকে।

 

 

 

ডিফারেন্সিয়াল প্রোটেকশন রিলে

তানজির মাহমুদ

 

বৈদ্যুতিক সিস্টেম বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সুরক্ষায় বিভিন্ন ধরণের রিলে ব্যবহৃত হয়। তাদের মধ্যে ডিফারেন্সিয়াল রিলে অন্যতম। বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ আভ্যন্তরীন ত্রুটি সাধারনত গুলি খুব সংবেদনশীল হয়ে থাকে। অন্যান্য রিলে যখন তার মধ্য দিয়ে পূর্ব নির্ধারিত মানকে অতিক্রম করে তখন কাজ করে এক্ষেত্রে ডিফারেন্সিয়াল রিলে নীতিটি কিছুটা আলাদা। কার্শফের কারেন্ট এর সূত্র মতে রিলে কয়েলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত বৈদ্যুতিক শক্তি সার্কিটের দুটি পৃথক অংশ থেকে আগত দুটি বৈদ্যুতিক শক্তি এর যোগফল ছাড়া কিছুই নয়। কার্শফের কারেন্ট এর সূত্র অনুসারে ডিফারেন্সিয়াল রিলে কোন বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ এর মধ্যে প্রবাহিত দুই বা ততোধিক বৈদ্যুতিক কারেন্ট প্রবাহের মানের পার্থক্যের উপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়ে থাকে। বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ সুরক্ষা অঞ্চলের মধ্যে ঘটে যাওযা ত্রুটি গুলির  সংবেদনশীলতার সাথে সুরক্ষা প্রদান করাই ডিফারেন্সিয়াল রিলে এর কাজ। জেনারেটর, ট্রান্সফরমার, ফিডার, বড় মোটর, বাস—বার ইত্যাদির সুরক্ষার জন্য ডিফারেনশিয়াল প্রোটেকশন রিলে ব্যবহৃত হয়। ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী ডিফারেন্সিয়াল রিলে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।‘

 

ডিফারেন্সিয়াল প্রোটেকশন রিলে কাজ করার জন্য নিম্নলিখিত শর্ত সমূহের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে:

 

১। যে বৈদ্যুতিক সিস্টেম এ রিলে ব্যবহার করা হবে তার দুই বা ততোধিক বৈদ্যুতিক পরিমাণ থাকতে হবে।

 

২। দুই বা ততোধিক বৈদ্যুতিক পরিমাণ এর বিস্তারের মধ্যে প্রায় ১৮০০ ডিগ্রী পার্থক্য থাকতে হবে।

 

 

 

কারেন্ট ট্রান্সফরমার

বিশুদ্ধ নন্দ পুরব্রাহ্মণ

 

যখন কোনো ট্রান্সমিশন লাইন দিয়ে high level এর AC Current চলাচল করে তখন সেই কারেন্টকে বিভিন্ন measuring instrument (যেমন ammeter, multimeter ইত্যাদি) দিয়ে সহজে মাপা যায় না। High level এর কারেন্টকে মাপার জন্য এক ধরনের Transformer ব্যবহার করা হয় যাকে Current Transformer বা CT বলে।

 

সিটি সাধারনত ০২ ধরনের ব্যবহার হয়ে থাকে। যথাক্রমেঃ

 

(১) মিটারিং উদ্দেশ্যে

(২) প্রোটেকশনের উদ্দেশ্যে

 

মিটারিং এ ব্যবহারঃ যে সকল ক্ষেত্রে উচ্চ মাত্রার কারেন্ট পরিমাপের প্রয়োজন হয় অর্থাৎ যেখানে সরাসরি এনার্জি মিটার অথবা সিটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

 

প্রোটেকশন এ ব্যবহারঃ ফল্ট কারেন্ট হলে অধিক পরিমানে কারেন্ট/ ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়। সেকেন্ডারী কারেন্ট ট্রান্সফরমার রিলেতে সংযোগ করা থাকে যা এই অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহ সেন্স করে রিলে তে বার্তা পাঠায়।

 

কারেন্ট ট্রান্সফরমারের মূলনীতিঃ

 

সাধারণ ট্রান্সফরমারের মত কারেন্ট ট্রান্সফরমার গুলোতেও প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি টার্মিনাল থাকে এবং প্রতিটা টার্মিনালের মধ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক winding এর প্যাঁচ বা turn থাকে। তাই কারেন্ট এর মধ্য দিয়ে প্রাইমারি টার্মিনাল থেকে সেকেন্ডারি টার্মিনালে চলে যেতে পারে।কারেন্ট ট্রান্সফরমারে প্রাইমারী উইন্ডিং এ টার্ন সংখ্যা কম এবং সেকেন্ডারী উইন্ডিং এ টার্ন সংখ্যা বেশী থাকে। সেকেন্ডারী টার্ন সংখ্যা বেশী হওইয়ার কারনে লেঞ্জ এর সুত্র অনুযায়ী সেকেন্ডারী তে কারেন্ট বেশী বাধাগ্রস্থ হয়। কারেন্ট ট্রান্সফরমারের সুত্র অনুযায়ী,

 

টার্ন রেশিও,

  Ip / Is = Ns / Np

 

যেখানে,

প্রাইমারি টার্মিনালের কারেন্ট = Ip

সেকেন্ডারি টার্মিনালের কারেন্ট = Is

প্রাইমারি টার্মিনালের প্যাঁচ সংখ্যা = Np

সেকেন্ডারি টার্মিনালের প্যাঁচ সংখ্যা = Ns

 

যদি কোনো CT এর turn ratio = 2000 : 5 হয়, তবে এর মানে হচ্ছে এই কারেন্ট ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি সাইড দিয়ে 2000A ইনপুট কারেন্ট দিলে সেকেন্ডারি সাইড দিয়ে মাত্র 5A কারেন্ট পাওয়া যাবে। তখন এই 5A কারেন্টকে খুব সহজেই অ্যামিটার কিংবা মাল্টিমিটার দিয়ে পরিমাপ করা যাবে। তবে বেশিরভাগ কারেন্ট ট্রান্সফরমারের turn ratio হয় = 100 : 5.

 

এখন এই turn ratio ব্যবহার করে high level এর কারেন্টকে মাপা যায়। কারন turn ratio এর মান যত হবে তত দিয়ে সেকেন্ডারি টার্মিনালের কারেন্টের মানকে যদি গুন দেয়া হয় তবে আমরা প্রাইমারী সাইডের high level এর কারেন্টকে পাবো।

 

ধরুন, কোনো CT এর turn ratio = 100 : 5

 

= 100 / 5

= 20

যদি কোনো high level current source এর সাথে এই CT কে যুক্ত করার পর তার সেকেন্ডারি টার্মিনাল দিয়ে 15A কারেন্ট পাওয়া যায়, তবে এই পরিমান কারেন্টকে turn ratio দিয়ে গুন করতে হবে। তখন CT এর প্রাইমারি সাইড দিয়ে আসা কারেন্টের মান পাওয়া যাবে। তাহলে, প্রাইমারি সাইডে কারেন্টের মান-

 

= Turn Ratio * Secondary terminal current

= 20 * 15

= 300A

অর্থাৎ এই CT এর প্রাইমারি টার্মিনাল দিয়ে 300A এর high level current flow হচ্ছে।

 

নিচে একটা কারেন্ট ট্রান্সফরমারের সার্কিট ডায়াগ্রাম দেখানো হলো, যেখানে এর প্রাইমারি টার্মিনাল high level কারেন্ট লাইনের সাথে সিরিজে যুক্ত এবং সেকেন্ডারি টার্মিনাল অ্যামিটার এর সাথে যুক্ত-

Current Transformer গুলো ভোল্টেজের ক্ষেত্রে step up হিসেবে কাজ করে, কিন্তু কারেন্টের ক্ষেত্রে step down হিসেবে কাজ করে। এ জন্য এই ট্রান্সফরমার গুলোর প্রাইমারি টার্মিনালে turn বা প্যাঁচ সংখ্যা বেশি থাকে এবং সেকেন্ডারি টার্মিনালে turn সংখ্যা কম থাকে।

 

এছাড়া সেকেন্ডারি টার্মিনালে যদি turn সংখ্যা বাড়ানো হয় তবে সেই winding এর চারপাশে বেশি পরিমাণ magnetic flux তৈরি হবে। লেঞ্জের সূত্র অনুসারে এই এক্সট্রা magnetic flux সেকেন্ডারি টার্মিনাল দিয়ে প্রবাহিত হওয়া কারেন্টকে বাঁধা দিবে। ফলে secondary কারেন্টের মান কমে যাবে এবং কমে যাওয়া কারেন্টকে খুব সহজেই অ্যামিটার কিংবা মাল্টিমিটার দিয়ে মাপা যাবে।

 

 

কারেন্ট ট্রান্সফরমারের বাস্তবিক ব্যবহারঃ

 

১)  বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানে যেখানে লোড বেশী সেখানে মিটারিং এ সিটি ব্যবহিত হয়ে থাকে।

 

২) উপকেন্দ্রের কন্ট্রোল প্যানেলে যেখানে মিটারিং এবং প্রোটেকশন উভয় প্রয়োজন হয়।

 

৩) পাওয়ার ট্রান্সফরমারে যেখানে উইন্ডিং টেম্পারেচার কন্ট্রোলের জন্য রিলের সাথে সিটি ব্যবহার করা হয়।